Advertisement and Rabindranath

বিজ্ঞাপনে রবীন্দ্রনাথ

১৯৪১ সালের অগাস্ট মাসের গোড়ায় রবীন্দ্রনাথের মহাপ্রয়াণ হয় আর ১৯৪৭-এর অগাস্ট মাসে ভারত স্বাধীন হল, অর্থাৎ কবির মৃত্যুর ৬ বছর পরে যখন দেশের পরাধীনতা ঘুচলো, তখন বহু বছরের আকাক্ষিত মুক্তিকে স্মরণীয় করে রাখতে ১৯৪৭ সালের ১৫ অগাস্ট, শুক্রবার কলকাতা মহানগরীর বিভিন্ন সংবাদপত্রের প্রতিটি পাতায়, বিভিন্ন সংস্থা বিজ্ঞাপন প্রকাশ করেছিল। সেই সব বিজ্ঞাপনে কোনও পণ্যের গুণগান না করে সবাই স্বাধীনতার প্রথম প্রভাতকে আলোকিত করতে দেশমাতৃকার বন্দনা করে বিচিত্র সব বিজ্ঞাপন প্রকাশ করেছিল। তার মধ্যে এমন অনেক বিজ্ঞাপন ছিল, যার ভেতর রবীন্দ্রনাথের বাণী, গান, কবিতা এবং উদ্ধৃতি ব্যবহার করা হয়েছিল। এমন বেশ কয়েকটি বিজ্ঞাপন বাংলা এবং ইংরেজি দুটি ভাষাতেই প্রকাশিত হয় আর যে কাগজগুলোতে এগুলো প্রকাশিত হয়েছিল, সেইসব সংবাদপত্রগুলো হল আনন্দবাজার পত্রিকা, যুগান্তর, অমৃতবাজার, হিন্দুস্তান স্ট্যান্ডার্ড, দ্য স্টেটসম্যান ইত্যাদি। 

15th Aug

স্বাধীন ভারতের নতুন ভোরে ইংরেজি সংবাদপত্র দ্য ‘স্টেটসম্যান পত্রিকায় প্রকাশিত হিন্দুস্তান কো-অপারেটিভ ইনসিওরেন্স সোসাইটি লিমিটেড -এর প্রচারিত একটি ইংরেজি বিজ্ঞাপনে ভারতের জাতীয় পতাকার নীচে where mind is without fear কবিতাটি ছাপা হয়েছিল। তার নীচে ছোট করে লেখা ছিল Tagore। 

 P M bagchi

ফাউনটেইন পেনের আদর্শ কালি প্রস্তুতকারক সংস্থা পি. এম. বাকছি এন্ড কোম্পানি লিমিটেডের একটি বিজ্ঞাপনে ব্যবহৃত হয়েছিল কবির একটি গানের কয়েকটি লাইন। গানটি হল, ‘ওই মহামানব আসে জীবদ্দশায় কবির শেষ জন্মদিন উপলক্ষে লেখা এই গানটি সভ্যতার সংকট বইতে ছাপা হয়েছিল এবং এখনও ছাপা রয়েছে। 

D N Basury

ডি এন বসুর হোসিয়ারি ফ্যাক্টরীর উদ্যোগে প্রকাশিত অন্য একটি বিজ্ঞাপনে আমরা দেখতে পাই স্বাধীন দেশের ত্রিবর্ণ জাতীয় পতাকার পাশে কবি রচিত, ‘তোমার পতাকা যারে দাও, তারে বহিবারে দাও শকতি।’ প্রসঙ্গত পাঠকদের জানিয়ে রাখি যে বিশেষ এই গানটি আজও শান্তিনিকেতন আশ্রম বিদ্যালয়ে প্রতি বছর প্রজাতন্ত্র দিবস ও স্বাধীনতা দিবসে গাওয়া হয়। 

National Insurance

সেদিনের একটি বহুল প্রচারিত বাংলা দৈনিকে প্রকাশিত একটি বিজ্ঞাপনে অশোকস্তম্ভের নীচে রবীন্দ্ররচনার চারটি লাইন ব্যবহার করা হয়েছিল। এই বিজ্ঞাপনটি প্রকাশিত হয় ন্যাশনাল ইনসিওরেন্স কোম্পানির দ্বারা। 

Him kalyan

হিমকল্যাণ ওয়ার্কস কলকাতা শিরোনামের একটি প্রতিষ্ঠান তাদের বিজ্ঞাপনের একদম প্রথমেই নবীন রাষ্ট্রের জাতীয় পতাকার পাশে রবীন্দ্রনাথ রচিত জাতীয় সংগীতের একটি লাইন ব্যবহার করেছে। এর নীচে তারা স্বাধীনতার প্রথম দিনটিকে জাতীয় মুক্তিদিবস বলেও উল্লেখ করেছে। এরপর পরাধীনতার শৃঙ্খল থেকে ভারতের মুক্তিলাভের বিষয়ে একটি লেখা আর সব শেষে লেখা বন্দেমাতরম। 

অবশ্য ‘জন গণ মন’ গানটি ১৯৫০ সালে জাতীয় সংগীত হিসেবে গৃহীত হয়। গানটির পাঁচটি শ্লোকের মধ্যে প্রথম শ্লোকটিকেই জাতীয় সংগীতের মান্যতা দেওয়া হয়েছে। এই প্রসঙ্গে একটা মজার কথা বলা প্রয়োজন, সেটা হল ১৯৪৪ সালে বিমল রায় পরিচালিত, ‘উদয়ের পথে’ ছবির টাইটেল কার্ডের নেপথ্যে ‘জন গণ মন’ গানটির সুর আবহসংগীত হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছিল। মনে রাখতে হবে যে, দেশ তখনও পরাধীন এবং গানটিও জাতীয় সংগীত হিসেবে স্বীকৃতি লাভ করেনি। 

এই পর্বে যখন স্বাধীনতার প্রথম দিবসে প্রকাশিত বিভিন্ন বিজ্ঞাপনে রবীন্দ্ররচনা ব্যবহারের বিষয়ে আলোচনা করলাম তখন স্বাধীনতা আন্দোলনের অন্যতম পথিকৃৎ দেশবরেণ্য দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জন দাস এবং বিশ্বকবি একসঙ্গে, ‘সাধনপথে’ শীর্ষক সিরিজের ৬টি বইয়ের প্রশংসা করে একটি বিজ্ঞাপন করেন। এই সিরিজের অন্তর্গত ৬খানি বইয়ের নামগুলি হল, ‘জাতীয়তার অনুভূতি’, ‘কুটির শিল্প’, ‘ব্যক্তিগত অর্থনীতি’, ‘লাভজনক কৃষি’, ‘রং ও রঞ্জনবিদ্যা’ এবং ‘মানুষ তৈরির মসলা’প্রতিটি বইয়ের মূল্য ছিল আট আনা। বিজ্ঞাপনে প্রকাশনী সংস্থার নাম না থাকলেও জনৈক অমরেশ কাঞ্জিলাল এবং বইগুলি প্রাপ্তিস্থানের ঠিকানা দেওয়া রয়েছে। এই বিজ্ঞাপনটি বাংলার ১৩২৮ সালের ৬ মাঘ ‘বিজলী’ পত্রিকার ৩৬ নম্বর পৃষ্ঠায় প্রকাশিত হয়েছিল।

অন্যদিকে সুইজেরল্যান্ডের চকোলেট কোম্পানি দ্বারা প্রকাশিত চকোলেট কার্ডে কবীন্দ্র রবীন্দ্রর ছবি ব্যবহারের বিষয়ে অন্য কোনও অবসরে আলোচনা করা যাবে।